সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : বিয়ের পর বড় রাজারামপুরে শ্বশুর বাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন সালাউদ্দিন (৩৯)। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করতেন তিনি। গত শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাজশাহীর কাটাখালী থানার সামনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্যদের সঙ্গে মারা যান সালাউদ্দিন, তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও শ্যালিকা।
শনিবার (২৭ মার্চ) রাত ১১টার দিকে পীরগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠে সালাউদ্দিনসহ নিহত ১৭ জনের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক ও স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১২ বছর আগে পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের ইয়াছিন আলী মণ্ডলের (৮০) ছেলে সালাউদ্দিন বিয়ে করে পার্শ্ববর্তী রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় রাজারামপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। শুক্রবার (২৬ মার্চ) সকালে পীরগঞ্জের কয়েকটি ব্যবসায়ী পরিবারের সঙ্গে সালাউদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীতে বেড়াতে যান। ওইদিন দুপুর সোয়া ২টার দিকে মাইক্রোবাসটি রাজশাহীর কাটাখালী থানার সামনে পৌঁছামাত্র ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোটি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আগুন ধরে নিমিষেই মাইক্রোবাসের চালকসহ পীরগঞ্জের ১৭ জন নিহত হন।
প্রাণে বেঁচে যায় মাইক্রোবাসের যাত্রী রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের মোকলেছার রহমানের ছেলে পাভেল মিয়া। সে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ওই দুর্ঘটনায় পাভেলের মা-বাবাও নিহত হন।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন-সালাউদ্দিন (৩৯), স্ত্রী শামছুন্নাহার (৩২), শ্যালিকা কামরুন্নাহার বেগম (৪১), ছেলে সাজিদ (১০) ও মেয়ে সাবাহ খাতুন (৩), রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় মহাজিদপুর গ্রামের ফুল মিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), ছেলে ফয়সাল (১৫), মেয়ে সুমাইয়া (৭) ও সাবিহা (৩), মিঠিপুর ইউনিয়নের দুরামিঠিপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৪৫), পীরগঞ্জ পৌরসভার প্রজাপাড়ার মোটরসাইকেল মেকার তাজুল ইসলাম ভুট্টো (৪০), স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫), ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইয়ামিন (১৪), রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের মোকলেছার রহমান (৪০) ও তার স্ত্রী পারভীন বেগম এবং পীরগঞ্জ পেীর এলাকার পচাকান্দর মহল্লার মাইক্রোচালক হানিফ মিয়া (৩০)।
দুর্ঘটনার ৩২ ঘণ্টা পর শনিবার রাত ১০টায় ১৭টি লাশ রাজশাহী থেকে ট্রাকযোগে পীরগঞ্জে এলে বেদনাঘন পরিবেশ তৈরি হয়। উপজেলা সদরে স্বজন ও এলাকাবাসীর কান্নার রোল পড়ে যায়। কারণ, পীরগঞ্জবাসী একসঙ্গে এত লাশ আগে দেখেননি। পরে রাত ১১টার দিকে পীরগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে তাদের জানাজা সম্পন্ন হয়।
ইসলামি বিধান অনুযায়ী পৃথকভাবে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে নিহতদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। সালাউদ্দিনের লাশ তার গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটিতে এবং তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও শ্যালিকার লাশ বড় রাজারামপুরে দাফন করা হয়েছে।
সালাউদ্দিনের বৃদ্ধ বাবা ইয়াছিন আলী মণ্ডল (৮০) বলেন, ‘বু-ছোল (স্ত্রী-সন্তান) ছাড়ি বাবা (ছেলে সালাউদ্দিন) মোর কাছেই আলো (এলো)। তবে মরা হয়া (মৃত হয়ে)। যে কয়দিন বাঁচিম (বাঁচবো), বাবার (ছেলের) কবর দেকিম (দেখব) আর কান্দিম (কাঁদব)।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিরোদা রানী রায় নিহতদের জানাজা ও দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।